ভারতীয় দল এবারের ICC Champions Trophyতে খেলেছে পাঁচটিতে, আর জিতেছে পাঁচটি ম্যাচেই। প্রত্যয়ীভাবেই রবিবার দুবাইয়ে তৃতীয়বারের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতল ভারত। আইসিসির সব ইভেন্ট মিলিয়ে এটি ভারতের সপ্তম ট্রফি। এর আগে জোড়া টি২০ বিশ্বকাপ, জোড়া ওডিআই বিশ্বকাপ এবং দুবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ভারত। ২০০২ সালে যুগ্মভাবে এবং ২০১৩ সালে এককভাবে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতল ভারত। রবিবার দুবাইয়ের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারাল তারা। তবে যতটা সহজে জেতা উচিত ছিল, তা হল না। নিউ জ়িল্যান্ডও লড়াই করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না। অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হলেন রোহিত শর্মারা। ২৫ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতকে। সেই হারের বদলা নিলেন রোহিতেরা। গত বছর জুন মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। ৯ মাসের মধ্যে অধিনায়ক হিসাবে আরও একটি আইসিসি ট্রফি জিতলেন রোহিত। কোচ হিসাবে সফল গৌতম গম্ভীর। নিজের প্রথম আইসিসি ট্রফিতেই দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন তিনি।
টসভাগ্য সঙ্গ দিল না রোহিতের
চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটি ম্যাচেও টস জিততে পারলেন না রোহিত। ফাইনালেও সেই ছবি দেখা গেল। এক দিনের ক্রিকেটে টানা টস হারের নজির গড়লেন ভারত অধিনায়ক। তাতে অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি ভারতের। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হেসেছেন রোহিত।
ভাল শুরু নিউ জ়িল্যান্ডের
ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি নিউ জ়িল্যান্ড। দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়ং দ্রুত রান করছিলেন। ভাল দেখাচ্ছিল রাচিনকে। দুই পেসার মহম্মদ শামি ও হার্দিক পাণ্ড্যকে নিশানা করেন তাঁরা। দেখে মনে হচ্ছিল, বড় রান করার লক্ষ্য নিয়েছেন নিউ জ়িল্যান্ডের দুই ওপেনার। তাঁদের আটকাতে পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই দুই স্পিনারকে বল দিতে হয় রোহিতকে।
ভারতকে ম্যাচে ফেরান বরুণ
ভারতকে আরও এক বার ম্যাচে ফেরালেন বরুণ চক্রবর্তী। বল করতে এসে শুরুতেই সুযোগ তৈরি করেন তিনি। রাচিন বড় শট মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন। বাউন্ডারিতে সেই সুযোগ ফস্কান শ্রেয়স আয়ার। তাতে দমেননি বরুণ। ১৫ রানের মাথায় ইয়ংকে আউট করে নিউ জ়িল্যান্ডকে প্রথম ধাক্কা দেন ভারতীয় স্পিনার। পরে যখন গ্লেন ফিলিপ্স হাত খোলার চেষ্টা করছেন তখন ৩৪ রানের মাথায় তাঁকে বোল্ড করেন বরুণ। ১০ ওভার বল করে ৪৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি।
নজর কাড়লেন কুলদীপ
ভারতের চার স্পিনারের মধ্যে আগের কয়েকটি ম্যাচে কুলদীপ যাদবকে সকলের শেষে বল দিয়েছিলেন রোহিত। কিন্তু এই ম্যাচে রোহিত আগেই কুলদীপের হাতে বল তুলে দেন। সেই সিদ্ধান্ত কাজে লাগে। নিজের প্রথম বলেই ৩৭ রানের মাথায় রাচিনকে বোল্ড করেন তিনি। ১১ রানের মাথায় নিউ জ়িল্যান্ডের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার কেন উইলিয়ামসনকে ফেরান তিনি। জোড়া ধাক্কা নিউ জ়িল্যান্ডকে অনেকটা পিছিয়ে দেয়। যে রান তাড়া করতে চাইছিল সেই লক্ষ্য থেকে অনেকটা পিছিয়ে আসতে হয় তাদের। ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন কুলদীপ।
ম্যারাথন ইনিংস মিচেলের
পর পর উইকেট পড়তে থাকায় জুটি গড়ার দরকার ছিল নিউ জ়িল্যান্ডের। সেই কাজটা করেন ড্যারিল মিচেল। শুরুতে ধীরে খেলছিলেন তিনি। নিজের উইকেট পড়তে দেননি। টম লাথাম, গ্লেন ফিলিপ্স ও মাইকেল ব্রেসওয়েলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। ধীরে ধীরে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ৯১ বলে নিজের অর্ধশতরান করেন মিচেল। শেষ পর্যন্ত ৬৩ রান করে মহম্মদ শামির বলে আউট হন তিনি। ধীরে রান করলেও দলকে একটি সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যান মিচেল।
ব্রেসওয়েলের ঝোড়ো ইনিংস
একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, ২২০ রান করতেও সমস্যা হবে নিউ জ়িল্যান্ডের। সেই কাজটা করে দেখালেন ব্রেসওয়েল। কঠিন সময়ে সহজেই বড় শট খেললেন তিনি। ব্রেসওয়েল নিশানা করলেন ভারতের দুই পেসারকে। শেষ দিকে ঝোড়ো ইনিংস খেললেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪০ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। তাঁর ব্যাটেই ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান করল নিউ জ়িল্যান্ড।
স্পিনারদের সাফল্যের দিনে ব্যর্থ শামি, হার্দিক
ভারতের স্পিনারেরা ভাল বল করলেও পেসারেরা ব্যর্থ। শামি ও হার্দিককে নিশানা করলেন নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটারেরা। শামি ন’ওভার বল করে ৭৪ রান দিলেন। নিলেন মাত্র ১ উইকেট। হার্দিক তিন ওভারে দিলেন ৩০ রান। কোনও উইকেট পাননি। দুই পেসার মিলিয়ে ১২ ওভারে ১০৪ রান দিয়েছেন। সেখানে স্পিনারেরা ৩৮ ওভারে দিয়েছেন ১৪৪ রান। পেসারের একটু ভাল বল করতে পারলে নিউ জ়িল্যান্ডের রান আরও কম হত।
ক্যাচ মিস্ ভোগাল ভারতকে
এই ম্যাচেও ভারতের ফিল্ডিং খারাপ হল। চারটি ক্যাচ পড়ল। মহম্মদ শামি, রোহিত শর্মা, শ্রেয়স আয়ার, শুভমন গিল ক্যাচ ফিরলেন। তার ফলে সুবিধা হল নিউ জ়িল্যান্ডের। শুধু ক্যাচ ফস্কানো নয়, বাউন্ডারিতে খারাপ ফিল্ডিং করলেন কুলদীপ, শুভমন। ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে এক রানের বদলে দু’রান হল। ভারত যদি ক্যাচগুলি ধরতে পারত তা হলে নিউ জ়িল্যান্ড অনেক কম রানে আটকে যেত। ফাইনালের মতো ম্যাচে এই রকম ক্যাচ ফস্কানো অপরাধ। যদিও তার খেসারত দিতে হয়নি ভারতকে।