ছাত্রছাত্রীদের উন্নত শিক্ষা প্রদানের জন্য বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। বিগত ৫টি আর্থিক বছরে রাজ্যে স্নাতক ও অস্নাতক শিক্ষক পদে এখন পর্যন্ত মোট ৪,৬৫৬ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে।
বুধবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে এই তথ্য তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে রাজ্যে নিপুন মিশন চালু হয়। তারপর থেকেই নিপুন মিশনের অন্তর্ভুক্ত প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষাদানের লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এসকল উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে – নিপুন ত্রিপুরা মিশনের অধীনে ১০,১৮২ জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ‘ফাউন্ডেশন্যাল লিটারেসি এন্ড নিউমেরেসি’ শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে বিদ্যালয়গুলিতে কার্যক্রম ভিত্তিক পাঠদান শুরু হয়েছে।
ডাঃ সাহা জানান, রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে নিপুন ত্রিপুরা বাস্তবায়নে প্রশিক্ষিত করে তুলতে ২০০ জন ব্লক রিসোর্স পার্সন এবং ক্লাস্টার রিসোর্স পার্সনকে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। রাজ্যে নিপুন মিশনের অধীন প্রতিটি বিদ্যালয়ের শ্রেনিকক্ষে নিপুন কর্নার নামক একটি সুনির্দিষ্ট শিক্ষণ-শিখন সহায়ক উপকরণ সমৃদ্ধ স্থান গড়ে তোলা হয়েছে।শিশুর প্রাক শৈশব কালীন যত্ন এবং শিক্ষা বিষয়ে এখন পর্যন্ত ২৬৪৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সাথে সাথে বিভিন্ন রকমারি খেলার সরঞ্জাম ও প্রদান করা হয়ে থাকে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো জানান, প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বিদ্যালয়ে অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে। ছাত্রছাত্রীদের উন্নত শিক্ষা প্রদানের জন্য বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়, যেমন স্কুলড্রেস, প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মান (মিড-ডে-মিল) লাইব্রেরী বই, শিক্ষণ সহায়ক সামগ্রী ক্রিয়া সামগ্রী, বিজ্ঞান কিটস, গণিত কিটস ইত্যাদি।
পিএম পোষণ প্রকল্পের রাজ্যের সকল সরকারী ও সরকারী অনুদান প্রাপ্ত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পাঠরত (প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত) সকল ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রতি বিদ্যালয় দিবসে রান্না করা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী জানান, মিড-ডে-মিলের পাশাপাশি ধলাই জেলার (এসপিরেশন্যাল জেলা) অন্তর্গত সকল সরকারী ও সরকারী অনুদান প্রাপ্ত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত ৪৭,৭৯২ জন ছাত্রছাত্রীদেরকে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে প্রতিটি বিদ্যালয় দিবসে প্রাতঃরাশ প্রদান করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বল্প খরচে, নিজের হাতে শিক্ষক শিখন সহায়ক উপকরণ তৈরিতে এবং ব্যবহারে উৎসাহিত করতে রাজ্যে দ্বিতীয়বারের মত আয়োজন করা হয় রাজ্যস্তরীয় শিক্ষণ-শিখন সহায়ক উপকরণ প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতা। এই প্রদর্শনীতে ১৬০টিরও বেশী জেলাস্তরে নির্বাচিত শিক্ষক-শিখন সহায়ক উপকরণ প্রদর্শিত হয় এবং সব মিলিয়ে প্রায় ৭,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা এতে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণি উপযোগী স্তরে পৌঁছে দিতে এনসিইআরটি-র আদলে রাজ্যেও “বিদ্যাসেতু মডিউল” নামক ৯ সপ্তাহের একটি ব্রিজ কোর্স চালু করা হয়।২০২৪ সালে রাজ্যে এই বিদ্যাসেতু মডিউলের ব্যবহার এবং ফলাফল এনসিইআরটি-র প্রতিনিধি দল কর্তৃক বেস লাইন ও এন্ড লাইন ইভালুয়েশনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এতে কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে নিপুণ মিশনের বাস্তবায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।